ব্রেকিং নিউজ
প্রসূতির মৃত্যু নিয়ে ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের বিবৃতি

প্রসূতির মৃত্যু নিয়ে ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদন
গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও সামাজিক যোগাযোগ এবং গণমাধ্যমে “ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু” শিরোনামে সংবাদে সংবাদ প্রকাশিত হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিম্নরূপঃ
গত ৪ জুন/২০২২ইং রাত ৯টা ৩০ মিনিটে গাইনী কনসালটেন্ট ডাঃ ফাতিমা জান্নাতের চেম্বারে টেকনাফের জনৈক জিয়াউর রহমানের অন্ত:স্বত্বা স্ত্রী ফারজানা ইয়াছমিন প্রসব ব্যাথা নিয়ে আসেন। তিনি প্রাথমিকভাবে রোগী দেখে জিজ্ঞেস করেন, আপনার পূর্বের অপারেশনের স্থানের ব্যথা কখন থেকে, তখন রোগী ফারজানা জানান, মাগরিবের পর থেকে।

উল্লেখ্য যে, এটি ছিল ফারজানার ৩য় গর্ভধারণ এবং পূর্বের ২টি সন্তানই সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারী হয়। ডাঃ ফাতিমা জান্নাত বলেন, আপনাদের তো ১ তারিখ অপারেশনের দিন ছিল, তখন আসেননি কেন? তখন রোগী বলেন, ব্যথা ছিল না, সেজন্য আসিনি।
তাহলে আপনারা একটা জরুরী ভিত্তিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করেন। আল্ট্রাসনোগ্রাফী ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না। এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করতে না পেরে পুনঃরায় ডাঃ ফাতিমা জান্নাতের চেম্বারে ফিরে আসেন এবং ডাক্তারকে অবহিত করেন যে, আল্ট্রাসনোগ্রাফী করতে পারিনি। তখন রোগীর অত্যধিক ব্যাথার কারণে রোগীর স্বামী বলেন, ৩ তারিখ আমরা টেকনাফে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করিয়েছি, প্রয়োজনে ঐ রিপোর্ট দিয়ে অপারেশন করেন। কিন্তু ডাঃ ফাতিমা জান্নাত বলেন, ঐ রিপোর্টে পূর্ববর্তী অপারেশনের স্থানের পুরুত্ব ও বাচ্চার বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ নাই। কিন্তু এই তথ্য (পুরুত্ব, বাচ্চার ওজন ও বাচ্চার অবস্থা) জানা দরকার। এটা ছাড়া অপারেশন সম্ভব না।
পরক্ষণে ডাঃ ফাতিমা জান্নাত রেডিওলজিষ্ট ডাঃ রাহাত নুর তুলিকে ফোনে অনুরোধ করে শেভরণে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করার ব্যবস্থা করেন। যদি ও তখন (রাত ১০ টা ২৫ মিনিট) শেভরণে আল্ট্রাসনোগ্রাফী রিসিভ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ডাঃ রাহাত নুর তুলি আল্ট্রাসনোগ্রাফী করে সোয়া ১১ টার সময় মোবাইলে ডাঃ ফাতিমা জান্নাতকে রোগীর বিষয়ে অবহিত করেন এবং বলেন, রোগী ফারজানার পূর্বের সিজারের জায়গায় খুব বেশী পাতলা হয়ে গেছে, যে কোন সময় Uterus rupture (জরায়ু ছিঁড়ে যেতে পারে) হয়ে যেতে পারে এবং তাতে মা ও বাচ্চার মৃত্যুর সমুহ সম্ভাবনা আছে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানান। পরে রোগী তার মহিলা অভিভাবক ও অন্যান্য সহযোগীদের সহযোগিতায় ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের ৩য় তলায় অপারেশন থিয়েটারে কর্মরত থাকা ডাঃ ফাতিমা জান্নাতের সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। তখন ডাঃ ফাতিমা জান্নাত রোগীর প্রসব ব্যথা উঠেছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সেখানে তিনি দেখেন রোগীর জরায়ুর মুখ (cervix soft and show present) নরম হয়ে গিয়েছে এবং তৎক্ষনাৎ তিনি রোগীর স্বামী/অভিভাবককে খোঁজেন।
ডাঃ ফাতিমা জান্নাত রোগী (ফারজানা ইয়াছমিন) দেখে রোগীর মহিলা অভিভাবক ও স্বামীকে তার জরায়ুর অবস্থা অবহিত করে তাৎক্ষণিক অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোগী ও তাঁর স্বামী থেকে মৌখিক ও লিখিত সম্মতি নিয়ে রাত ১২ টা ৫ মিনিটে ফারজানার সিজার অপারেশন শুরু করেন। সিজারের পূর্বে রোগীর জটিলতার কথা চিন্তা করে রক্ত সরবরাহ করার জন্য রোগীর স্বামীকে চাহিদাপত্র প্রদান করা হয়। সিজার অপারেশন করে সুস্থ অবস্থায় বাচ্চাটি ফারজানার মহিলা অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করেন। (এটি ছিল ফারজানার ৩য় সিজার)। উল্লেখ্য, ২য় সন্তানের সিজারটিও ডাঃ ফাতিমা জান্নাত সম্পন্ন করেছিলেন।
বাচ্চা ডেলিভারীর পরপরই রোগী কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তখনই কর্তব্যরত Anesthesiologist ডাঃ অভীক কুমার বড়ুয়া, কার্ডিওলজিষ্ট ডাঃ জিএম সেলিম ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ শাহা আলম এবং Anesthesiologist ডাঃ নূর মোহাম্মদকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে আসার অনুরোধ করেন এবং উপরোক্ত ডাক্তারগণ অনতিবিলম্বে অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত হয়।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জিএম সেলিম আসার পূর্বে ডাঃ অভিক কুমার বড়ুয়া কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জিএম সেলিম আসার পরে রক্তচাপ বৃদ্ধি করার ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক করার জন্য জরুরী হৃদরোগের ঔষধ প্রয়োগ করেন এবং হৃদযন্ত্রের গতি ও প্রেসার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর অপারেশনের জায়গায় এবং প্রসবের রাস্তায় কোন রক্তক্ষরণ কিংবা জটিলতা না থাকায় অপারেশনস্থল সেলাই করে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়।
অপারেশন শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে রোগীর Primary PPH শুরু হয়। এরপর রোগীকে PPH কন্ট্রোলের জন্য oxitocic drug সহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই দেয়া হয়। পরবর্তীতে রক্তও দেওয়া হয়। কিন্তু PPH কন্ট্রোল না হওয়ায় রোগীর স্বামীর কাছ থেকে পুনঃরায় লিখিত সম্মতি নেওয়ার পর রোগীর জরায়ু Hysterectomy অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়। জরায়ু ফেলে দেওয়ার পরও Hysterectomy clamp, muscle, omentum থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তখন উপস্থিত সমস্ত ডাক্তারদের অভিমতে রোগীকে Acute DIC (রক্ত জমাট না বাঁধাজনিত সমস্যা) রোগী হিসেবে সনাক্তকরণ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, তখন রোগীর প্রসবের জায়গা ছাড়াও অন্যান্য স্থান যেমন- কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস প্রদান করার টিউবের পার্শ্ব থেকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, এর ফলশ্রুতিতে জরুরী ভিত্তিতে আরো ৩ ব্যাগ রক্ত, Blood volume expander (haemaceal), Inj. Noradrenalin প্রদান করা হয়। কিন্তু তারপরেও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ও জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপস্থিত ডাক্তারদের মতামতের ভিত্তিতে জীবন রক্ষা করার নিমিত্তে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউতে প্রেরণ করা হয়।এই ব্যাপারে ডাঃ জিএম সেলিম এর মতামত নেওয়া হলে, তিনি বলেন- কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর পরপরই আমি রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত হয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করার ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক করার জন্য জরুরী হৃদরোগের ঔষধ প্রয়োগ করি এবং হৃদযন্ত্রের গতি ও প্রেসার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। অপারেশন পরবর্তী Acute DIC (রক্ত জমাট না বাঁধাজনিত সমস্যা) কারণে পরবর্তী ২ ঘন্টা উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ার প্রেক্ষিতে সমস্ত উপস্থিত ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে আমরা রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করার পরে আমি ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ত্যাগ করি।

এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট Anesthesiologist ডাঃ অভীক কুমার বড়ুয়া বলেন- বাচ্চা ডেলিভারীর পরপরই রোগীর শ্বাসজনিত সমস্যা এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটে। এমতাবস্থায় রোগীর কৃত্রিম শ্বাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ঔষধ (adrenalin, noradrenalin) এবং রোগীকে শরীরে রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর Acute DIC (রক্ত জমাট না বাঁধাজনিত সমস্যা) কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালের আইসিইউতে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করি।সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ শাহা আলমের বক্তব্য নেওয়া হলে তিনি বলেন- আমাকে জরুরীভাবে অপারেশন থিয়েটারে ডাকা হলে, উপস্থিত হয়ে দেখি, রোগীকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে রিকভারী করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। রোগীর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে অপারেশনরত ডাঃ ফাতিমা জান্নাত রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে আমরা সকল ডাক্তারগণ হঠাৎ করে লক্ষ্য করছি যে, রোগীর Primary PPH হচ্ছে। সকল ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এতই তীব্র রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বিধায় তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত ডাক্তারগণের মতামতের প্রেক্ষিতে রোগীর স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে জরায়ু অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। Re-laparotomy তে আমি ডাঃ ফাতিমা জান্নাতকে Hysterectomy করতে সহায়তা করি এবং রোগীর অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায়, Acute DIC (রক্ত জমাট না বাঁধাজনিত সমস্যা) সনাক্তকরণের ভিত্তিতে রোগীকে আইসিইউতে হস্তান্তর করে আমি অপারেশন থিয়েটার ত্যাগ করি।
এই বিষয়ে ডাঃ ফাতিমা জান্নাত বলেন, এটা রোগীর ৩য় গর্ভধারণ। যেহেতু পূর্ববর্তী ২টি সন্তানই সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারী হয়েছে, সেজন্য সাধারণত ডেলিভারী তারিখের ৩ সপ্তাহের পূর্বে সিজার করতে হয়। সে অনুযায়ী এই রোগীর সিজারের তারিখ ছিল ০১ জুন, কিন্তু রোগী পূর্বের অপারেশনের জায়গায় ব্যথা নিয়ে আসেন ০৪ জুন। রোগীর পূর্বের অপারেশন স্থানের পুরুত্ব, বাচ্চার অবস্থা ও বাচ্চার ওজন জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফী পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিই। সে অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্টে দেখা যায়, পূর্বের অপারেশনের স্থান খুবই পাতলা হয়ে গেছে। তাই আমি জরুরী ভিত্তিতে অপারেশনের জন্য রোগীর স্বামীর কাছ থেকে মৌখিক ও লিখিত সম্মতি নিয়ে অপারেশন শুরু করি। বাচ্চা ডেলিভারীর পরপরই রোগী কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ফোন করে অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত করি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ দ্রুত উপস্থিত হন এবং আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা/চিকিৎসা প্রদান করি। কিন্তু এরপরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এবং Acute DIC (রক্ত জমাট না বাঁধাজনিত সমস্যা) সনাক্ত হওয়ায় আমি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ জরুরী ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিওতে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রেরণ করি।

নোটঃ Acute DIC (রক্ত জমাট না বাঁধাজনিত সমস্যা) একটি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের বিরলতম কারণ। এটি যেকোন অপারেশনের রোগীর ক্ষেত্রে হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর সুস্থতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এমনকি ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের কর্মচারীরাও রক্ত প্রদান করেন। এরপরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে রেফার করেন। পরদিন সকাল ৯ টা ৪৭ মিনিটে রোগী জেলা সদর হাসপাতাল এর আইসিইউ তে মারা যান।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল, সম্মানিত গাইনী বিশেজ্ঞ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী সাজিয়ে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। যা অত্যন্ত মানহানিকর ও কক্সবাজারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ। আমরা প্রকাশিত/প্রচারিত মিথ্যা সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি আমাদের এ বক্তব্যের পর সকল ধরণের মিথ্যা অপপ্রচার ও অপবাদের অবসান ঘটবে।

কর্তৃপক্ষ-
ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতাল

---------