খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:যানজট নিরসনে অক্টোবরে সিটিবাস সার্ভিসের উদ্যোগ নেয় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। এতে বাঁধসাধে ইজিবাইক, অটো শ্রমিক, মালিক সংগঠনগুলো। বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচির মুখে সিটিবাস সার্ভিসের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আরপিএমপি। তবে যানজট নিরসনে এবার অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেছে পুলিশ। অবৈধ ইজবাইকের দৌরাত্ম বন্ধ করতে নগরীতে নিবন্ধন ইজিবাইকগুলোকে বিশেষ কৌশলে নীল রং করা হচ্ছে। পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নিবন্ধিত ইজিবাইক চালকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে সারি সারি দাঁড়ানো নিবন্ধিত ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক। এসব ইজিবাইক নীল রং করার কাজে ব্যস্ত একদল শ্রমিক। কেউ রং প্রক্রিয়া করছে, কেউ ইজিবাইকগুলো সারিবদ্ধ করছে, কেউ রং স্প্রে করছে, কেউ রং করতে সহযোগিতা করছেন। নিবন্ধিত ইজিবাইকগুলোকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কালেক্টরেট মাঠে এসে রং করছে।
রংয়ের কাজে নিয়োজিত রানা মিয়া নামের এক শ্রমিক জানান, রং করার জন্য প্রথমে ইজিবাইকের সামনের কাঁচ পিভিসি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তারপর সাদা রং করে মাঠে শুকতে দেওয়া হয়। ৩০ মিনিট পর আবার সাদা রংগের ওপর নীল রং করা হয়। প্রতিটি ইজিবাইক রং করার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক নেতারা ইজিবাইক চালকদের বৈধ কাগজপত্রসহ রং করা খরচ বাবদ ৪০০ টাকা করে নেয়। রং করার শেষে তাদের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন শতাধিক ইজিবাইক রং করা হচ্ছে।
কালেক্টরেট মাঠে ইজিবাইকে রং করাতে আসা রংপুর নগরীর হাজীরহাট এলাকার বাসিন্দা এরশাদ আলী বলেন, এ্যালা কামাই কমি গেইছে। যাত্রী চেয়ে ইজিবাইক বেশি। শহরোত যে গাড়িগুলো চলে তাঁর তিন ভাগের দুই ভাগের লাইসেন্স নাই। আমার গাড়ি লাইসেন্স করা। পুলিশের মাইকিং শুনি নীল রং করার আসছি। এইটা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহইলে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি কমবে, যানজট কমবে, হামার কামাই বাড়বে।
কামাল কাছনা এলাকার বাসিন্দা ইজিবাইক চালক নওশের আলম বলেন, যেগলা গাড়ির লাইসেন্স নাই, সেই গাড়িগুলো শহরোত বেশি। সকাল বেলা বাইরের উপজেলাগুলা থাকিও অনেক গাড়ি ঢুকে। বেলা বাড়ার সাথে এটে যানজট নাগি যায়। এতো পরিমানে গাড়ি হইছে যে ১০ মিনিটের রাস্তা এখন ৩০ মিনিট নাগে। পুলিশ হামার গাড়ি নীল রং করাওছে। যার গাড়িত এই রং নাই তাক ধরবে। এতে রাস্তাত যানজট কমবে, দ্রুত যাত্রীক নিয়া যাবার পামো।
নীল রং করাতে আসা আরেক ইজিবাইক চালক মোনা মিয়া বলেন, ইজিবাইকের পাশাপাশি নিবন্ধিত ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলোও রং করাতে হবে।নগরীর ৮টি প্রবেশ মুখে চেকপোস্ট বসিয়ে নিবন্ধনহীন ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করলে তবেই যানজট কমে যাবে। যানজট কমলে দ্রুত যাবার পাব, যাত্রী স্বস্তি পাইবে। গাড়ির চার্জও বাঁচবে, কর্মঘণ্টাও বাড়বে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন ৫ হাজার ২৪০টি ইজিবাইক ও ৫ হাজার ১০৭টি ব্যাটারি চালিত রিকশার লাইসেন্স দিলেও মূল নগরীতে চলছে ৪০ হাজারেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা। প্রতিদিন সকালে মিঠাপুকুর, পীরগাছা, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জসহ রংপুর সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নিবন্ধনহীন ইজিবাইক-রিকশা নগরীর ভেতরে প্রবেশ করছে। ফলে নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলা সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা কারণে নগরীতে চলাচল করা দুরহৃ হয়ে পড়েছে। যানজটে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এ উদ্যোগ ব্যতিক্রম। এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে অন্তত নগরবাসী স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যানজট রংপুর নগরীর অন্যতম একটি সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে আমরা ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম চালু, যান চলাচলে বিকল্প সড়কের ব্যবহার, নিবন্ধিত ইজিবাইক রং করে চিহ্নিত করা, সড়কের কার্যকর ব্যবহার, পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণসহ নানামূখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। যানজট নিরসনে জনপ্রতিনিধি, শ্রমিক-মালিক সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন।