ব্রেকিং নিউজ
বনবিভাগের ডিএফও আনোয়ারের নির্দেশ উপেক্ষিত, স্বপদে বহাল বনরাক্ষস জয়নাল

বনবিভাগের ডিএফও আনোয়ারের নির্দেশ উপেক্ষিত, স্বপদে বহাল বনরাক্ষস জয়নাল

এস এম হুমায়ুন কবির কক্সবাজার

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের রামুর বাঁকখালি বন রেঞ্জে সরকারী বনের সম্পদ মনের মতো করে হরিলুট চালিয়ে এখন লাখ লাখ টাকা দুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে বনরাক্ষস হেডম্যান জয়নাল। হেডম্যান হওয়ার সুবাদে জয়নাল সবাই কে দম্ভ দেখায়, বনের বিট কর্মকর্তা থেকে জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ বনবিভাগীয় কর্মকর্তা পর্যন্ত সবার সাথে গভীর সম্পর্ক। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন হেডম্যান জয়নালের সাথে সখ্যতা প্রসঙ্গ অস্বীকার করে দৈনিক জনতা বলেছেন, সরকারী বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সরকারী বন রক্ষণাবেক্ষণে সহযোগিতা হিসাবে কাজ করে থাকেন হেডম্যানরা। যারা সহযোগিতার পরিবর্তে লুটপাট কারবারে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে তাদের কে হেডম্যান পদ থেকে ক্লোজ করে শান্তিমূলক আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাঁকখালি বন রেঞ্জে হেডম্যানরা সরকারি বনজ সম্পদ দিব্যি হরিলুট কারবারে জড়িত থাকায় ইতোমধ্যে কচ্ছপিয়া বনবিটের হেডম্যান মন্জুর ও কাউয়ারখোপ সদর বনবিটের হেডম্যান আবদুস সালাম কে হেডম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া হয়েছে। ঘিলাতলি বনবিটের হেডম্যান জয়নালের বিরুদ্ধে ও সরকারী বনভুমির পাহাড় কর্তন, কাঠ চুরি, সরকারী বনভুমি জবরদখলকারীদের দখলে সহায়তা, অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বন ভুমি জবরদখল দেওয়া, সরকারি বনভুমি স্বয়ং হেডম্যান জয়নাল জবরদখল করে পাবলিক কে মোটা অংকের অর্থে বিক্রি সহ এন্তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। ইতোপূর্বে বনবিভাগ বাদী হয়ে একাধিক মামলা দায়ের করেছে আদালতে। একই সাথে দুর্নীতিবাজ জয়নাল হেডম্যান কে ইস্তফা দিয়ে যথাযথ বিধি অনুসরণ পূর্বক নোটিশ জারি করার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন বাঁকখালি বন রেঞ্জ অফিসার সরওয়ার জাহান কে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন আরো জানিয়েছেন, ঘিলাতলি বনবিটের ছাগলখাইয়া উঠুনির সামনে বিশাল সরকারি বনভুমি জবরদখল করে রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠীর আস্তানা গড়ে তোলা, মেইনচমার ঝিরিতে লাখ লাখ সরকারি বনায়নের গাছ কর্তন, পাহাড় কর্তন।

চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল “আলোচিত বনরাক্ষস হেডম্যান বহালতবিয়তে!” শিরোনামে সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর পত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বন প্রশাসনের কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বনবিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন ও সহকারী বন সংরক্ষক ডঃ প্রাণতোষ রায়।

স্হানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, মূলত হেডম্যান ছিলেন আমিন উল্লাহ। আমিন উল্লাহ মারা যাওয়ায় পিতার আসনে হেডম্যান পদে স্থলাভিষিক্ত হলেন আলোচিত-সমালোচিত জয়নাল। পৈত্রিক সূত্রে তেমন জায়গা জমি না থাকলে ও বন বিভাগের শত একর ভূ-সম্পত্তি জবরদখল করে এখন বড় জমিদার।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বাঁকখালি বন রেঞ্জের আওতাধীন ঘিলাতলি বনবিটে এমন বনরাক্ষস দীর্ঘ দিন ধরে নির্বিচারে বনজ সম্পদ হরিলুট কারবারে জড়িত থাকলেও সংশ্লিষ্ট বন প্রশাসন হেডম্যান জয়নালের টিকিটি ও ছুঁতে পারে নাই বরং যিনিই ঘিলাতলি বনবিটে দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন তারা হেডম্যান জয়নালের সাথে শখ্যতা গড়ে চলতে হয়।

সে বিট কর্মকর্তা কিংবা বন প্রহরী যে পদেই হউক কেউ প্রথা ভঙ্গ করলেই হেডম্যান জয়নাল তার নিজস্ব সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে হামলা করান কিংবা সরকারি বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হেডম্যান জয়নালের লালিত-পালিত লোকজন দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে উর্দ্ধতন মহলের কান ভারী করে বদলি কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্হা করান এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন হেডম্যান জয়নালের রোষানলে পড়ে ঘিলাতলি বনবিট থেকে বদলি হওয়া ফরেষ্টার পদ মর্যাদার এক বনবিট কর্মকর্তা কে।

ওই ফরেষ্টার বর্তমানে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন অপর একটি বনবিট অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ফরেস্টার জানান, তিনি ঘিলাতলি বনবিটে যোগদান কালে হেডম্যান জয়নালের বনজ সম্পদ হরিলুট, টাকার বিনিময়ে জবরদখল দেওয়া, হেডম্যান জয়নাল নিজে সরকারী বনের বিশাল পাহাড় কেটে ফিশারী নির্মান সহ নানাবিধ অপরাধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। হেডম্যান জয়নালের অপকর্মের বিষয়ে বনের উপরিমহলে জানিয়ে অপরাধের ধরন মোতাবেক হেডম্যান জয়নালের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা রুজু করেছি। তবে জয়নালের ঘিলাতলি বনবিটের সংঘটিত অপরাধের তুলনায় বন প্রশাসনের মামলা দায়েরের সংখ্যা অপ্রতুল। এ বিষয়ে সচেতন মহল মনে করছেন, হেডম্যান জয়নালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সমস্ত অপরাধের ভান্ডার খুঁজে বের করে বিধি মোতাবেক জবরদখল করা বন সম্পত্তি পুনঃ উদ্ধার এবং অপরাধের শাস্তির আওতায় আনা জাতি ও দেশের সম্পদ লুন্ঠনকারী হেডম্যান জয়নাল কে শাস্তির আওতায় আনার আহবান জানান।

পরিবেশবাদী মহলের অভিযোগ, বন প্রশাসন নানান কারণে হেডম্যান জয়নালের প্রতি দুর্বল। কয়েকটি মামলা দৃশ্যমান দেখিয়ে দায় সারছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নানান অপকর্মের নাটের গুরু ঘিলাতলি বনবিটের হেডম্যান বনরাক্ষস হেডম্যান জয়নালের অপরাধের ভান্ডার নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বন রক্ষণাবেক্ষণে সহযোগিতা করার প্রয়োজনে মূলত বন প্রশাসন হেডম্যান নিয়োগ দিয়ে থাকেন। অথচ বন রক্ষণাবেক্ষনের পরিবর্তে বনভুমি জবরদখলকারীদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন।বন ডাকাতি ও পাহাড় খেকো হিসাবে যার বিরুদ্ধে খোদ বন বিভাগের ৭/৮ মামলা আদালতে বিচারাধীন সেই জয়নাল এখনো কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ বাঁকখালি রেঞ্জ এর ঘিলাতলি বনবিটে হেডম্যান পদে রয়েছে বহাল তবিয়তে!
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ নিয়ন্ত্রিত বাঁকখালি বন রেঞ্জের আওতাধীন ঘিলাতলি বনবিট মূলত রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া ইউনিয়নে অবস্হিত বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বনভুমি রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন বন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনভুমি রক্ষণাবেক্ষণে স্হায়ী-অস্থায়ী বন জাগিরদার (ভিলেজার) থাকেন। বনজ জাগিরদারদের (ভিলেজার) সমন্বয় করে সরকারি বনজ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করার লক্ষ্যে বনবিট গুলোতে একজন করে হেডম্যান নিযুক্ত থাকেন।

সারাদেশে নিয়ম এক, ঘিলাতলি বনবিটে আরেক!
ঘিলাতলি বনবিটে বন ভুমির পরিমান মূলত ২৭ হাজার একর/ হেক্টর। ঘিলাতলি বনবিটে ১২/১৫ বছর পূর্বে হেডম্যান ছিলেন আমানউল্লাহ। আমানউল্লাহ মরণে হেডম্যানের শুন্য পদে আমিনউল্লাহর ১ম পুত্র জয়নাল নিজে কে হেডম্যান হিসাবে জাহির করে ঘিলাতলি বনবিটের বনভুমি জবরদখল, গাছ-গাছালী বিক্রি, পাবলিকের নিকট থেকে উৎকোচের বিনিময়ে বনভুমি জবরদখলে সহায়তা, মানুষ কে মিথ্যা মামলায় হয়রানি সহ গুরুতর অপরাধ সমূহে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন। বন রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে কাঠ চোরাকারবারি, বনভুমি জবরদখলকারি ও বনদস্যুদের সমন্বয়ে প্রায় এক যুগ ধরে বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন স্বঘোষিত হেডম্যান জয়নাল।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পি,ও,আর ৪ ঘিলা- ২০/২১, পি,ও,আর ৫ ঘিলা ২০/২১, পিওআর ০১ ঘিলা ২১/২২ সহ প্রায় ডজনখানেক বনের পাহাড় কর্তন, বনের কাঠ চোরাচালান, জবরদখলে সহায়তা সহ গুরুতর বন মামলা হেডম্যান জয়নালের বিরুদ্ধে ঘিলাতলি বনবিটের দায়িত্ব নিয়োজিত বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাদী হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে আদালতে দায়ের করেছেন যা এখনো আদালতে চলমান রয়েছে।কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাপ্তাহিক শীর্ষ খবরকে জানান, বনজ সম্পদ হরিলুট কারবারি হওয়ায় বনবিভাগের তরফ থেকে হেডম্যান জয়নালের বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক বন মামলা করা হয়েছে। যা কক্সবাজার বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমির হোসাইন এর সরকারি মোবাইল নং (০১৭১২১৯৫৯৪৬) একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে হলেও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

---------