ব্রেকিং নিউজ
৫ দিনের দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী

৫ দিনের দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী

এম. ওবায়েদুল কবীর: বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। শনিবার (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী পুজার মধ্যদিয়ে ৫ দিনের এ দূর্গোৎসব শুরু হয়। নরসিংদী জেলায় ৩৫৬টি মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেবী দুর্গার পূজা আরাধনা শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় মাটি দিয়ে একেকটি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে আজ থেকে তা পেলো পূর্ণতা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পূজামণ্ডপ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন করেছে জেলা পুলিশ। শনিবার পূজার প্রথমদিনে জেলা শহরে সবচেয়ে বড় সেবাসংঘ দূর্গা মন্দির, বাগ বিতান মণ্ডপ, অগ্রণী সংঘ মন্ডপ, ক্রিড়াচক্র মন্ডপসহ বেশ কয়েকটি দূর্গা মন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে বিশ্বে বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মন্দিরগুলোর প্রকৃতি ও আদলে সজ্জিত করে সাজানো হয়েছে মণ্ডপগুলো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এসব মণ্ডপে সপরিবারে এসে দেবীদূর্গার কাছে পূজা করে মনের অব্যক্ত কথা বলে প্রার্থনা করছেন। তবে শৃঙ্খলা রক্ষায় মণ্ডপে মণ্ডপে কমিটি গঠনের পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে অনেক মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুঞ্জিকা মতে গত রবিবার ( ২৫ সেস্টেম্বর) ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের পূণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া। বাঙ্গালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এ হচ্ছে দুর্গা দেবীর আগমনী বার্তা। মহালয়ার ছয় দিন পর শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। সেই হিসেবে শনিবার (১ অক্টোবর) দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন শুরু হয়েছে। বুধবার বিজয়া দশমী দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনের এ ধর্মীয় উৎসব শেষ হবে। এবার দেবী দুর্গার আগমন করছে গজে চড়ে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা দুর্গা পা রাখবেন মর্ত্যে। শাস্ত্র মতে, গজে দেবীর আগমনে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা দেখা যায়। অর্থাৎ চারিদিকে শস্যের উৎপাদন বেড়ে সুখ, সমৃদ্ধি, ও শুভ ফল আসবে। আর দেবীর ফিরে যাবেন নৌকায় করে, যার অর্থ শস্য ও জলবৃদ্ধি। দেবীর এই আগমন ও গমনে সনাতন ধর্মের যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য এ বছরটা সত্যিকার অর্থেই কল্যাণকর। দুর্গোৎসবে মণ্ডপে মণ্ডপে বাজছে ঢাকের ঢোল, কাঁসার ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনি। ভক্তদের আরাধনায় থাকবে অশুভ শক্তি বধের প্রার্থনা। নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার (১ অক্টোবর) দুর্গাদেবীর বেলষষ্ঠী পূজা, রবিবার(২ অক্টোবর) মহাসপ্তমী বিহিত পূজা, সোমবার (৩ অক্টোবর) মহাষ্টমী ওইদিন অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা, মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এক দিনে মহানবমী বিহিত পূজা এবং বুধবার (১৫ অক্টোবর) মহাদশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা এ বছর নরসিংদী জেলায় যে ৩৫৬টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী পৌরসভায় ৩২টি ও মাধবদী পৌরসভায় ১৫টি সহ সদর উপজেলায় মোট ১০৩টি, পলাশ উপজেলায় ৪৬টি, শিবপুর উপজেলায় ৭২টি, মনোহরদী উপজেলায় ৫২টি, বেলাব উপজেলায় ২২টি এবং রায়পুরা উপজেলায় ৬২টি মন্ডপে দেবী দুর্গার আরধনা করবে পূজারীরা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন সম্পন্ন করতে প্রত্যেকটি মণ্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এবারের দুর্গোৎসবে র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার বলেন, ‘এবার নরসিংদীতে ৩৫৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। প্রতিমা তৈরি, পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জনসহ দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিষদের সদস্যরা কাজ করছেন। এর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও র‌্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক ও সজাগ থেকে মণ্ডপগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনিল চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমরা সভা করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজা নির্বিঘ্নে পালন করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা কমিটির নেতাদের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপনের বিষয়টি নিয়েও মতবিনিময় করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নরসিংদীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব উদযাপন সম্পন্ন করতে পারবে। বিশেষ করে রাতে মণ্ডপগুলোতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে জেলা পুলিশদের সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বলা হয়েছে।’

---------