ব্রেকিং নিউজ
প্রাকৃতিক পরিবেশে গঙ্গাচড়ায় খারুভাজ উপজেলা প্রশাসন পার্কটি এখন দর্শনীয় স্থান

প্রাকৃতিক পরিবেশে গঙ্গাচড়ায় খারুভাজ উপজেলা প্রশাসন পার্কটি এখন দর্শনীয় স্থান

শরিফা বেগম শিউলী রংপুর প্রতিনিধিঃ রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খারুভাজ বিলে নির্মাণ করা হয়েছে এই ইকোপার্ক। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত এ পার্কে নগরের ব্যস্ততা ফেলে স্বস্তির খোঁজে প্রতিদিন আসেন হাজারও বিনোদন প্রেমীরা। এখানে দিনের তীব্র রোদে খড়ের ছাউ-নীর ছায়ায় আছে নিজেকে জিরিয়ে নেওয়ার পরিবেশ। সকালে পার্কের বিলে উড়ে আসে পাতি সরালি, সাদা বকের মতো অনেক পাখি। যেন নতুন জীবনধারা গড়ে উঠেছে খারুভাজ পার্কজুড়ে। আকাশে ভাসছে সাদা মেঘ। দলবেঁধে বিলের পানিতে হাঁসের ছুটোছুটি। ফুলের বাহারে হাসছে হরেক রকম গাছ। শোভাবর্ধনকারী গাছগাছালিতে সজ্জিত বিলের চারপাশ। সবুজের সমারোহে পাখির কলকাকলিতে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে রঙিন প্রজাপতি। ছাউনিতে বসে আড্ডা নয়তো বিলের বুকে নৌকা ভ্রমণ, এমনই প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে সাজানো হয়েছে গঙ্গাচড়ায় খারুভাজ পার্ক। যেখানে প্রাণ-প্রকৃতির মেলায় রয়েছে আনন্দ উপভোগের নির্মল বাতাস। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে খারুভাজ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন। উপজেলার বড় জলমহালগুলোর মধ্যে খারুভাজ বিলটি অন্যতম। এর আয়তন ১৮ দশমিক ৯৮ একর। বিগত সময়ে এখানে শুধু মৎস্য চাষই করতেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। তদারকি না থাকায় বিলের কিছু জায়গা স্থানীয়দের দখলে চলে যায়। প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে বর্তমান সরকার ইকোপার্ক নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করলে উপজেলা প্রশাসন থারুভাজকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিলের জমি দখলমুক্ত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে বিলটির সংস্কার, পাড় মেরামত, বসার বেঞ্চ নির্মাণ, গোলঘর, বিশ্রামের জন্য খড়ের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। খারুভাজ পার্কটিকে পুরো দেশে পরিচিত করতে ঢালাই করা ‘আই লাভ গঙ্গাচড়া’ লেখা বাক্য সম্বলিত একটি দৃষ্টিনন্দন ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিলের চারপাশে লাইট পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, খারুভাজ উপজেলা প্রশাসন পার্কের সম্মুখে খড়-বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটক। পার্কে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে নানা রং ও শোভাবর্ধনকারী গাছে সজ্জিত করা একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। ফোয়ারার নিচে থাকা অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ ছোটা-ছুটি করছে। শুধু তাই নয়, খারুভাজ বিলে রাখা শ্যালো নৌকায় করে নৌভ্রমণ উপভোগ করছেন শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষজন। পার্কের ভেতরে বিলের পাড়ে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, শিউলি, বকুল, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের সমারোহ। পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির গাছের মধ্যে গোল্ডেন সাওয়ার, ফরচুন, লিন্টেলা, নাইট কুইন, ইফোরবিয়া, ক- টোমুকুটের চারা রোপণ করা হয়েছে। সেখানে আসা দর্শনার্থীদের ছাউনিতে বসে খোশগল্প করতে দেখা গেছে। গজঘন্টার স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী শাহারিয়ার বলে, কদিন আগে পার্কে ঘুরতে এসেছিলাম। সেদিন পরিবেশটা খুব ভালো লেগেছিল। এর আগে ওই পার্কে কখনো যাওয়া হয়নি। অনেক প্রজাতির পাখপাখালি, গাছগাছালি আর বিলের পানিতে সূর্যের লুকোচুরি খেলা বেশ উপভোগ্য। আমি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নৌকায় চড়ে বিলটি ঘুরে দেখেছি। শখের বসে ছবি তুলতে আসা দর্শনার্থী আল শাহরিয়ার জিম বলেন, প্রকৃতিনির্ভর পরিকল্পনার কারণে খারুভাজ পার্কটি আমার কাছে ভালো লাগে এবং এটি ব্যতিক্রম। পার্ক বলতে আমরা বুঝি বিভিন্ন রাইড, দোলনাসহ কৃত্রিম সবকিছু। কিন্তু এখানে পুরো প্রকৃতিকে কাজে লাগানো হয়েছে। নগরের ব্যস্ততা ফেলে মুক্ত বাতাসে সময় কাটানোর একটি অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে নতুন এই পার্কটি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় জলমহাল খারুভাজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষ যেন নগরজীবনের ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে পারে। আমরা এখানে জীববৈচিত্র রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেছি। ইতোমধ্যে শীতের অতিথি পাখি এখানে আসতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, পার্কে রোপণ করা বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালির পরিচিতির পাশাপাশি এসবের উপকারিতা তুলে ধরে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। সবুজের সমারোহে এসে দর্শনীয় এ প্রকৃতিকে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে দর্শনার্থী ও পর্যটকরা। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পার্ক নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা খারুভাজে একটি ইকোপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করি। কারণ ইকোপার্ক আমাদের এসডিজি’র সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগিতার কারণে খারুভাজ পার্কটি তৈরিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। ট্যুরিজম বোর্ড আমাদের অর্থ বরাদ্দ দিলে এটিকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করা সম্ভব হবে। আমরা জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতিকে ঠিক রেখে পার্কটি নির্মাণ করেছে।##

---------