ব্রেকিং নিউজ
গোপালগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ধামাচাপা দিতে টাকার অফার

গোপালগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ধামাচাপা দিতে টাকার অফার

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিংগারকুল গ্রামের হাফিজুর চৌধুরী (৪২)। নাকের পলিপাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস এলাকার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু নাকের সমস্যা তো দুরের কথা উল্টো ভুল চিকিৎসায় জীবন দিতে হয়েছে তাকে। এমনই অভিযোগ করেছে নিহতের স্বজনরা ওই ক্লিনিকের কতৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর থেকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া ওই চিকিৎসকেরা পলাতক রয়েছে। তবে অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রোগীর স্বজনদের সাথে মিমাংসার জন্য কয়েক দফায় শালিস বৈঠকে করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে শহর জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে ক্লিনিক কতৃপক্ষ বলছে, কতৃপক্ষের ভুল নয় চিকিৎসকের ভুলে এমনটি হয়েছে। আর জেলার সিভিল সার্জন জানিয়েছেন বিষয়টি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানাগেছে, গত ৩ জুলাই সোমবার রাত আটটার দিকে নাকের পলিপাস জনিত সমস্যা নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে ভর্তি হন হাফিজুর চৌধুরী (৪২)। ভর্তির পর হাফিজুরকে অপারেশন জন্য ১১টি স্বাস্থ্য পরিক্ষা করানো হয়। তখন প্রতিটি পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রিপোর্ট ঠিক থাকায় ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাকের পলিপাসের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হাফিজুরকে। সেখানে নেওয়ার পর হাফিজুরকে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে ওই ক্লিনিকের ডাক্তার ডা. হিরম্ব রায় ও ডা. গোলাম সরোয়ার। চেতনানাশক পুশ করার পর মারা যান হাফিজুর। বিষয়টি স্বজনরা বুঝে উঠার আগেই স্বজনদের কাছে চিকিৎসার কথা বলে নিজেরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কৌশলে খুলনার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিক কতৃপক্ষ। সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত দেখে রোগীকে ফেরত দেয়।

পরে এনিয়ে মৃতের স্বজনরা অভিযোগ তুললে কয়েক দফায় মিমাংসার জন্য শালিস বৈঠকে বসা হয় ও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মোটা টাকার অফারও দেওয়া হয় মৃতের স্বজনদের। এখবর জানা জানি হওয়ার পর থেকে শহর জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে রোগীর স্বজন সাবুরা বলেন, আমরা হাফিজুর ভাইকে নাকের পলিপাসের জন্য পোস্ট অফিস মোড়ের ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করির। ভর্তির পর ১১টি স্বাস্থ্য পরিক্ষা দেয়। আমরা সব কয়টি পরিক্ষা করাই। সেখানে সব কয়টি রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে নিয়ে অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর হাফিজুর ভাই মারা যায়।

মারা যাওয়া হাফিজুরের ছোট ভাই শহিদুল চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সব রিপোর্ট ঠিকঠাক আসে। রিপোর্ট দেখে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর আমাদের না জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে আমাদেরকে জানানো হলে আমরা আমার ভাইয়ের সাথে যাই। খুলনা পৌঁছানোর পর সেখানকার একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ভাইকে মৃত দেখে ফেরত দেয়। পরে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিক কতৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে প্রেসার বেড়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

নিহত হাফিজুরের ছোট ভাই জিল্লাল চৌধুরী বলেন, আমার ভাইকে তারা ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলছে। তারা বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য আমাদের মোটা অংকের টাকার অফারও করেন। কিন্তু আমরা সেই অফার নাকচ করি। এতে বোঝা যায় তাদের গাফিলতির কারনে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় আমরা সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন ডা. গোলাম সরোয়ার ও ডা. হিরম্ব রায়। তাদের বক্তব্য নিতে ওই ক্লিনিকে গেলে পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে ক্লিনিকের মালিক অমর কান্তি রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফোনে কিছু বলা যাবে না সাক্ষাতে সামনাসামনি বলতে হবে। পরে তার সাথে কথা বলার জন্য ক্লিনিকে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে কৌশলে পালিয়ে যান।

তবে ক্লিনিকের ম্যানেজার শামিম বলেন, অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ম্যানেজমেন্টের কোন ভুল নেই, যা হয়েছে চিকিৎসকের ভুলে হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো এবং সেটা শীগ্রই সেটি করা হবে। #

---------